গুহায় ঢোকার আগে ঝুঁকি এড়াতে হ্যাজমাট স্যুটে পুরো শরীর ঢেকে নিল বিজ্ঞানীদের ছোট্ট দলটি। তারা মুখ ঢাকলেন মাস্কে, হাতে পরে নিলেন পুরু গ্লাভস। শরীরের প্রতিটি ইঞ্চি ঢেকে রাখতে এই বিশেষ ব্যবস্থা; নয়তো গুহার ভেতরে বাদুড়ের মলমূত্র গায়ে এসে পড়তে পারে। কে জানে হয়ত এর থেকেও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যেতে পারে প্রাণঘাতী কোনো অচেনা ভাইরাস!
বিজ্ঞানীদের এই দলটি কাজ করছেন ইকোহেলথ অ্যালায়েন্স নামের একটি মার্কিন এনজিওর হয়ে। অচেনা ভাইরাস শনাক্ত করে মহামারী ঠেকানোর চেষ্টাই তাদের কাজ।
বিশেষায়িত এই সংস্থার হলেন প্রধান পিটার ডাসজাক, যার নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের দলটি মাথায় আটকানো হেলমেটের বাতি জ্বালিয়ে বাদুড়ের ডেরার মুখে বাঁশঝাড়ের অন্ধকারে জালের ফাঁদ পেতে চলেছে।
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উহান প্রদেশে চুনাপাথরে গড়া গুহায় বিজ্ঞানীদের হানা দেওয়ার এই রোমাঞ্চকর বর্ণনা উঠে এসেছে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে।
সূর্যাস্ত হতেই খাবারের খোঁজে ডেরা ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে শুরু করে হাজার হাজার বাদুড়। কিন্তু গুহার বাইরে ডাসজাকের দলের বানানো জালের ফাঁদে আটকা পড়ে তারা।
বিজ্ঞানীরা এরপর জাল গুটিয়ে আনেন, মৃদু চেতনানাশক ব্যবহার করে আটকা পড়া বাদুড়ের দলটিকে ঘুম পাড়িয়ে দেন। তারপর বাদুড়ের ডানার ধমনী থেকে সংগ্রহ করেন রক্ত।
বাদুড়ের মুখের লালা এবং মলও এ সময় সংগ্রহ করা হয় বলে জানান ডাসজাক।
তাকে একজন ‘ভাইরাস শিকারি’ হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সিএনএন। নতুন কোনো রোগের কারণ হতে পারে এমন প্যাথোজেনের তালাশে গত ১০ বছরে ২০টি দেশে বাদুড়ের ডেরায় ডেরায় ঘুরেছেন এই বিজ্ঞানী।
উদ্দেশ্য একটাই, হঠাৎ মহামারীর মত ছড়িয়ে বিশ্বকে কাবু করার আগেই প্যাথোজেনকে শনাক্ত করা। মূলত করোনাভাইরাসের বিভিন্ন প্রজাতির খোঁজে রয়েছেন ডাসজাক।
তিনি বলেন, “আমরা এর মধ্যে ১৫ হাজারের বেশি নমুনা নিয়েছি বাদুড় থেকে; আর সেখান থেকে ৫০০ রকমের নতুন করোনাভাইরাস শনাক্ত করেছি।”
এর মধ্যে একটি নতুন করোনাভাইরাস তারা ২০১৩ সালে চীনের এক গুহায় পেয়েছিলেন, যেটি কোভিড-১৯ এর জন্য দায়ী ভাইরাসের পূর্বসূরী হয়ে থাকতে পারে।