জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এরআগেও তিন ফরমেটে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ,তবে এবারের জয়টা তাদের মাটিতে। তাইতো এর গুরুত্ব অনেক।
আজ রোববার হারারেতে তৃতীয় টি-২০ ম্যাচে পাঁচ উইকেটে জয় ২-১ এসিরিজ বাংলাদেশের।
এরআগে একমাত্র টেস্ট এবং তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজও জিতেছে টাইগাররা।
এবারের সফরে দ্বিতীয় টি-২০ বাদে সব ম্যাচেই জয় এসেছে। শেষ পর্যন্ত তিন ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরে অজিদের বিপক্ষে প্রস্ততিটা ভালোই সেরেছ বাংলাদেশ দল।
শেষ ম্যাচেও টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ১৯৩ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় স্বাগতিকরা। জবাবে সৌম্যর হাফ সেঞ্চুরির পাশাপাশি অধিনায়ক রিয়াদের ৩৪ ও শেষ দিকে শামীম পাটোয়ারীর ৩১ রানে চার বল হাতে রেখেই জয় বাংলাদেশের।
ম্যাচসেরা ও সিরিজ সেরা হয়েছেন সৌম্য সরকার।
জয়ের জন্য ১৯৪ রানের টার্গেটে সিকান্দার রাজার প্রথম ওভারে সৌম্যর চার-ছয়ে আসে ১৩ রান। তৃতীয় ওভারে মুজরাবানি বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই ফেরান নাইমকে। মিডঅফে লুকের হাতে ক্যাচ দেন সাত বলে তিন রান করা নাইম, ২০ রানে প্রথম উইকেটের পতন। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে আসেন সাকিব। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে আসে ৫০ রান। অস্টম ওভারে জংওয়ের বলে টানা দুই ছক্কা হাকালেও, চতুর্থ বলে লংঅফে ধড়া পড়েন মায়ার্সের হাতে। ১৩ বলে ২৫ রান করেন সাকিব। ৭০ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১০ ওভার পাঁচ বলে শতরান আসে বাংলাদেশের ইনিংসে। ৪০ বলে (ছয় বাউন্ডারি, এক ছক্কা) হাফ সেঞ্চুরি করেন সৌম্য। তবে নিজের ইনিংস আরও দীর্ঘ করতে পারেননি, ৬৮ রান (৪৯ বলে, নয় বাউন্ডারি ও এক ছক্কা) করে, লুকের বলে লংঅফে মুসাকান্দার হাতে ধড়া পড়েন। অধিনায়কের সঙ্গী হন বাহাতি তরুন আফিফ। দুই ছক্কায় ১৪ রান করে ফেরেন আফিফ, দলীয় সংগ্রহ ১৫০।
মাঠে আসেন শামীম পাটোয়ারী। শেষ চার ওভারে টার্গেট ৪০ রান। ১৭তম ওভারে রিয়াদের ছক্কা ও শামীমের বাউন্ডারিতে আসে ১২ রান। ১৮ তম ওভারে শামীমের তিন বাউন্ডারিতে আসে ১৫ রান। শেষ ১২ বলে দরকার ১৩ রান। দলের জয় থেকে সাত রান দুরে থাকতে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অধিনায়ক রিয়াদ, ২৮ বলে ৩৪ রান করে। এরপর ক্রিজে আসেন উইকেটরক্ষক সোহান। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৫ রানের। প্রথম বলেই বোলারের মাথার উপর দিয়ে বাউন্ডারি হারিয়ে স্কোর সমান করেন শামীম। দ্বিতীয় বলে উইনিং শট। চার বল হাতে রেখেই পাঁচ উইকেটের জয়। ১৫ বলে ছয় বাউন্ডারিতে ৩১ রানে অপরাজিত ২০ বছর বয়সী শামীম।
এরআগে বাংলাদেশের সামনে ১৯৪ রানের বড় লক্ষ্য ছুড়ে দেয় জিম্বাবুয়ে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই মারমুখী চেহারায় হাজির হয় জিম্বাবুয়ে। দুই ওপেনার তাদিওয়ানাশে মারুমানি আর ওয়েসলে মাদভেরে প্রথম তিন ওভারে তোলেন ২৮ রান। চতুর্থ ওভারে তাসকিন আহমেদের ওপর চড়াও হন মাদভেরে। টানা পাঁচ বলে পাঁচটি চার হাঁকান তিনি। ওভারের শেষ বলটি কোনোমতে বাঁচাতে সক্ষম হন টাইগার পেসার। ২৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি আসে জিম্বাবুয়ের ইনিংসে। পঞ্চম ওভারে সাকিব বোলিংয়ে এসে দেন ৩ রান। পরের ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন মারুমানি। শেষ বলে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে জিম্বাবুইয়ান ওপেনারকে (২০ বলে ২৭) বোল্ড করে দেন সাইফউদ্দিন। পাওয়ার প্লে’র ছয় ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ এক উইকেটে ৬৩।
এরপর রেগিস চাকাভা ঝড়ো গতিতে সীমানার ওপারে একের পর এক বল পাঠান। নাসুম আহমেদের করা ১১তম ওভারে টানা তিন বলে তিন ছক্কা হাঁকান চাকাভা। পরের ওভারেই ঝড় থামিয়েছেন সৌম্য সরকার। যদিও নাইম শেখ আর শামীম হোসেন পাটোয়ারীর যৌথ প্রচেষ্টার ফসল চাকাভার উইকেটটি। এবারও সজোরে হাঁকিয়েছিলেন চাকাভা, ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচটি নিয়েও ভারসাম্য রাখতে পারেননি নাইম। তবে দঁড়ির বাইরে যাওয়ার আগে দারুণ বুদ্ধিমত্তায় বলটি ওপরে তুলে দেন তিনি, পাশেই দাঁড়ানো শামীম কয়েক পা দৌড়ে গিয়ে ক্যাচটি তালুবন্দী করেন। তাতেই চাকাভাকে সাজঘরে ফেরানো গেছে। ২২ বলে ছয় ছক্কায় ৪৮ রান করেন তিনি।
সে ওভারেই সৌম্য তুলে নেন জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক সিকান্দার রাজাকে, রানের খাতা খোলার আগেই। জোড়া উইকেট হারিয়ে রানের গতি কমে যায় জিম্বাবুয়ের।
বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পরের চার ওভারে তারা তুলতে পারে মাত্র ২৪ রান। সাকিবের করা ১৬তম ওভারের প্রথম বলটি রিভার্স সুইপ করেছিলেন মাদভেরে। ৩৬ বলে ছয় বাউন্ডারিতে ৫৪ রানের ইনিংস খেলা এই ব্যাটসম্যানের ক্যাচটি থার্ডম্যানে সহজেই তালুবন্দী করেন শরিফুল। পরের ওভারে শরিফুল দেন ৭। সাইফউদ্দিনের ১৮তম ওভারে তিন চার আর এক ছক্কায় ১৯ রান তুলে নেয় জিম্বাবুয়ে।
১৯তম ওভারে দারুণ বোলিং করে মাত্র দুই রান দেন শরিফুল। শেষ ওভারে সাইফউদ্দিন আবার ১৬ দেন। টানা দুই বলে চার আর ছক্কা হাঁকান রায়ান বার্ল, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১৫ বলে ৩১ রানে। স্বাগতিকদের সংগ্রহ পাচ উইকেটে ১৯৩ রান।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন পার্টটাইমার সৌম্য সরকার। তিন ওভারে ১৯ রান দিয়ে নিয়েছেন দুই উইকেট। শরিফুল ইসলাম চার ওভারে ২৭ এবং সাকিব চার ওভারে ২৪ রান দিয়ে নেন একটি করে উইকেট। সাইফউদ্দিন এক উইকেট পেলেও চার ওভারে দিয়েছেন ৫০ রান।