দাওয়াত কি এবং কেনো দিবো? - মেঘনার খবর
মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ২ আশ্বিন ১৪৩১

দাওয়াত কি এবং কেনো দিবো?

দাওয়াত শব্দটা আমাদের কাছে অতি পরিচিত। তবে মুসলিম হিসেবে অবশ্যই দাওয়াতী কাজের সাথেও আমাদের পরিচিত হওয়া অতিব জরুরী। দাওয়াত শব্দটি আরবি এর বাংলা অর্থ আহ্বান করা, ডাকা ইত্যাদি।
কোনো ব্যক্তিকে দ্বীনের পথে আহ্বান করা, সেটা হতে পারে নন-মুসলিমের জন্য ঈমানের দিকে এবং মুসলিমের জন্য নামাজ কিংবা অন্যান্য ইবাদাতের দিকে। তবে প্রতিটি পদেই দাওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম। নবী রাসূল গনের মূল দায়িত্ব ছিলো তাদের উম্মতদেরকে দাওয়াত দেয়া।সৎ কাজের প্রতি আহ্বান এবং অসৎ কাজের বাধা দেয়া। প্রচার, নসীহা,ওয়াজ তথা এক কথায় আল্লাহর দ্বীনের পথে আহ্বান করাই ছিলো প্রত্যেক নবী এবং রাসূলের কাজ। সকল নবী-রাসূলগণ স্ব-উম্মতকে শিরক কুফর ও পাপকাজ পরিহার করে সঠিক পথে আহ্বান করেছেন। নবী রাসূলগণের অনুপস্থিতিতে সেই দ্বীনের কাজকে আঞ্জাম দিতে হবে জাতির শ্রেষ্ঠ মানুষ আলেম ওলামাদেরকে। একজন মুমিনের মিশন ভীষণ হবে দাওয়াত দেয়া। সে নিজে যেভাবে দ্বীনকে বুঝেছে, অপর ভাইকেও দ্বীন বুঝতে সহযোগীতা করা। আল্লাহতালা পবিত্র কোরআনে ন্যায় কাজের আদেশ এবং অন্যায় কাজের নিষেধ করেছেন এখানে মূলত একত্রে আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আহ্বানকেই বুঝানো হয়েছে।

দাওয়াদের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে রসূল, পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।
(সূরা মায়িদা, আয়াত ৬৭)।

রাসূল (সা.) আমাদের মাঝে নেই,তার মানে এই নয় যে দাওয়াতকে আমরা বন্ধ করে দিবো। (আল ওলামায়ু ওরাছাতুল আম্বিয়া) আলেমরাই হচ্ছে নবীদের ওয়ারিশ। এখানে আলেম বলতে জ্ঞানী ব্যক্তিদের বুঝানো হয়েছে। যারা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখে এবং তা মান্য করে ব্যক্তি জীবনে তারাই হচ্ছে প্রকৃত জ্ঞানী। তাহলে নবী রাসূলদের সেই দ্বায়িত্ব আমাদেরকেও পালন করতে হবে। এই মহান দ্বায়িত্ব পালনে যদি রুক্ষতা আসে তাহলে সেখান থেকে আরশের মালিক মহান আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে হেফাজত করবেন ইনশাআল্লাহ। পবিত্র কোরআনের অন্যত্রে মহান আল্লাহতায়ালা আবারো ঘোষণা করেন, ‘সুতরাং আপনি তাদেরকে (সত্যের পথে) আহবান করুন এবং (এই আহ্বানে) অটল থাকুন যেভাবে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন। আর আপনি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না; এবং বলুন: আল্লাহ যে কিতাবই নাযিল করেছেন আমি তাতে ঈমান এনেছি এবং আমি আদিষ্ট হয়েছি তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে। আল্লাহ্ আমাদের রব এবং তোমাদেরও রব। আমাদের কাজের প্রতিফল আমরা ভোগ করব, আর তোমাদের কাজের প্রতিফল তোমরা ভোগ করবে; আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোন বিবাদ নেই, আল্লাহ আমাদেরকে (ও তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন) একত্রিত করবেন এবং সকলের ফিরে যাওয়া তারই কাছে। (সূরা শূরা, আয়াত ১৫)।

যেখানে আল্লাহতায়ালা নবী (সা.) দ্বীনের পথে আহ্বানের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন, সেখানে আমরা নবী (সা.) এর উম্মত হিসেবে অবশ্যই এই দ্বায়িত্ব পালন করতে হবে।যে কিতাব আমাদের জন্য দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই মানতে হবে।আমাদের খেয়াল খুশি মতো যা ইচ্ছে তা করা যাবে না। আমরা যা কিছুই করি না কেনো সবকিছু প্রতিনিয়ত লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে,যে পরিমাণ আমল করবো, সেরুপ এর প্রতিদান পাবো। ইসলাম পরিপন্থী কাজের জন্য অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।

এখানে পরের আয়াতেও আল্লাহতায়ালা দাওয়াত নিয়ে বলেন, ‘যারা আল্লাহর আহ্বানে সাড়া আসার পর তাঁর সম্পর্কে বিতর্ক করে তাদের যুক্তি-তর্ক তাদের রবের দৃষ্টিতে অসার ও ভিত্তিহীন। তারা (আল্লাহর) ক্রোধের পাত্র এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
(সূরা শূরা,আয়াত ১৬)।

এই দুই আয়াতের শুরুতে মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে উদ্দেশ করে বলেন: মুশরিক ও আহলে কিতাবসহ সব মানুষকে আপনার কাছে ওহী হিসেবে পাঠানো দ্বীনের দিকে আহ্বান করুন; কারণ এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা সর্বশেষ বিধিবিধান। আপনি এই পথে অটল-অবিচল থাকুন এবং তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দায়িত্ব পালনে অবহেলা করবেন না। তাদের প্রত্যেক দল তাদের ইচ্ছা ও স্বার্থ চরিতার্থ করার কাজে আপনাকে ডাকবে, কিন্তু আপনি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না বরং সবাইকে আপনার রবের একত্ববাদের ছায়াতলে একত্রিত করার চেষ্টা করুন।

আপনি আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বলুন: আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা প্রতিটি কিতাবের প্রতি আমার ঈমান আছে। আমি তোমাদের কিতাবসমূহ ও নবীদের মেনে নিয়েছি এবং আমার রিসালাত হচ্ছে তাদের রিসালাতেরই ধারাবাহিকতা মাত্র। পূর্ববর্তী সব নবীর ধর্মের সমষ্টি ও সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ রূপই হচ্ছে আমার ধর্ম ইসলাম। পূর্ববর্তী নবীদের মতো আমিও তোমাদের সঙ্গে ন্যায়পূর্ণ আচরণ করতে ও সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে আদিষ্ট হয়েছি। তোমাদের এবং আমার রব একই সত্ত্বা। আমি আমার রিসালাতের সত্যতার কারণ তোমাদের সামনে তুলে ধরেছি।

আমাকে আমার কর্মের জন্য দায়ী থাকতে হবে এবং তোমাদেরকেও তোমাদের কর্মের জন্য দায়ী করা হবে। তোমাদের সামনে সব যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। এখন তোমাদের সঙ্গে আমাদের আর কোনো বিবাদ বা ব্যক্তিগত আক্রোশ নেই। আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ও আমাদেরকে একত্রিত করবেন এবং সেদিনের বিচারক হবেন সেই একক সত্ত্বা। সেদিন দেখা যাবে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ও আমাদের মধ্যে কি ফয়সালা দান করেন?

পরের আয়াতে বলা হচ্ছে: কিন্তু দুঃখজনকভাবে তারা বিবাদ শুরু করে এবং ইসলামকে দুর্বল করার চেষ্টা চালায়। তারা যখন দেখে একদল ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং আরেকদল এই এশী ধর্ম গ্রহণে করতে যাচ্ছে তখন তারা তা সহ্য করতে পারে না। যেসব মুশরিক সত্য উদ্ভাসিত হয়ে যাওয়ার পরও শুধুমাত্র বিদ্বেষ ও গোঁয়ার্তুমির কারণে নিজেদের মিথ্যা বিশ্বাসে অটল থাকে তারা কোনো দলিল বা যুক্তির ধার ধারে না। তারা ইসলাম গ্রহণ না করার জন্য যেসব অজুহাত দাঁড় করায় তা আল্লাহর দরবারে বাতিল ও ভিত্তিহীন বলে প্রতীয়মান হয়। এর পরিণতিতে তাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

এই দুই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:
(ক) আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে খুশি করতে গিয়ে ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা যাবে না।

(খ) ঐশী ধর্মগুলোর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে না থাকলে এই কাজ করা সম্ভব নয়।

(গ) আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক সত্য প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত চলতে পারে। কিন্তু সত্য সামনে আসার পর তর্ক করার প্রয়োজন নেই। প্রতিপক্ষ যদি তা মেনে না নেয় তাহলে চুপচাপ তাদেরকে তাদের দায়িত্বে ছেড়ে দিতে হবে।

দাওয়াত নিয়ে রাসূল (সা.) হাদিসে বর্ণনাও দিয়েছেন।
যেমন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন,একটি আয়াত হলেও তা আমার পক্ষথেকে প্রচার কর। আর বনী ইসরাইল সম্পর্কে আলোচনা কর,তাতে দোষ নেই। যে ব্যক্তি আমার প্রতি ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা আরোপ করে,তার নিন ঠিকানা জাহান্নামে সন্ধান করা উচিত।
(বোখারী, বাবু মা যুকিয়া আন বানি ইসরাইল ৩২০২)
তাহলে আমরা জানতে পারলাম একটি মাত্র আয়াত হলেও তার প্রচার করতে হবে, সবচেয়ে কৃপন ওই ব্যক্তি যার কাছে দ্বীনের ইলম আছে অথচ সে তার প্রচার করা থেকে বিরত আছে। নবী (সা.) অন্য এক হাদিসে বর্ণনা করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন,তার পিতা বলেন, আমি নবী করীম (সা.) কে বলতে শুনেছি,তিনি বলেছেন আল্লাহতায়ালা সেই ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন, যে ব্যক্তি আমার কোনো হাদীস শুনেছে এবং যেভাবে শুনেছে, সেভাবেই তা অপরের নিকট পৌছিয়েছে।কেননা অনেক সময় যার কাছে দাওয়াত পৌছানো হয় সে যার নিকট থেকে শুনেছে তার চেয়ে বেশি রক্ষণাবেক্ষণকারী হয়ে থাকে। (তিরমিযী,বাবু মা জাআ ফিল হাসসি ২৫৮১)

অতএব আমরা যেভাবে হাদিসের বর্ণনা শুনবো ঠিক সেভাবেই তা পৌছে দিবো ইনশাআল্লাহ।

পরিশেষ কথা হলো দাওয়াত অবশ্যই দিতে হবে কারন আল্লাহতায়ালা কোরআনে ইরশাদ করেছেন, তার চেয়ে আর কে উত্তম কথার অধিকারী হতে পারে যে মানুষকে ডাকে আল্লাহর পথে, সৎকর্ম করে এবং বলে নিশ্চই আমি মুসলমানদের অন্তর্ভূক্ত।
(সূরা হা-মীম সাজদাহ, আয়াত ৩৩)।

পরিশেষ কথা হলো,দাওয়াত অবশ্যই দিতে হবে, আমি মুসলিম হিসেবে যে রুপ আমল করি, অপর মুসলিমকেও আমলের পথে আহ্বান করতে হবে।আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে দ্বীনের পথের একেকজন দ্বায়ী হিসেবে কবুল করুন আল্লাহুম্মা আমিন।

শেয়ার করুনঃ

সাবেক জ্বালানী উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী গ্রেপ্তার

১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১:২৮

ড. ইউনূসের সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন নেদারল্যান্ডসের

১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১:২১

এক দশক পর দেশে ফিরছেন সাংবাদিক মুশফিক

১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১:১৮

প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক কল্যাণের এমডির চুক্তি বাতিল

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:০৮

ভূমি অফিসের কর্মীদের কঠোর হুঁশিয়ারি হাসনাত আব্দুল্লাহর

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:০৬

রিমান্ড শেষে কারাগারে আ স ম ফিরোজ

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭:০২

খালেদার ১১ মামলার শুনানি ৩১ অক্টোবর

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬:৫৯

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভ্যাটিকান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬:৩৭

বিজিবি সদস্যদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১০:৫৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নেতৃত্বে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ ঘোষণা

৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১০:৫০

বিয়ের প্রলোভনে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ, যুবক গ্রেফতার

৮ মে, ২০২১, ৪:৫৩

চেলসির সঙ্গে ড্র, ফাইনালের পথ কঠিন হলো রিয়ালের

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৫৩

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে দিল্লিকে হারিয়ে শীর্ষে কোহলিরা

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৫১

আরও ২/৩ দিন হাসপাতালে থাকতে হবে খালেদা জিয়াকে

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৪৩

খাদ্যের সঙ্গে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতেও কাজ হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

২২ মে, ২০২১, ১০:০৭

পপ সম্রাটের বিরদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রত্যাখান

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৪০

ইউনেসকোর প্রেস ফ্রিডম পুরস্কার জিতলেন মারিয়া রেসা

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৩৮

দিরাইয়ে বজ্রপাতে দুই সহোদরের মৃত্যু, আহত ৩

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৩৭

রাজধানীতে অভিযানে গ্রেফতার ৩০

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৩৬

ওবায়দুল কাদের আপনি রেহাই পাবেন না: কাদের মির্জা

২৮ এপ্রিল, ২০২১, ৬:৩৩


উপরে