প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বছরের পর বছর চলছে লক্ষ্মীপুর রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউপির চরইন্দুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। জোয়ার ও বৃষ্টির পানি যেনো পিছু ছাড়ছে না বিদ্যালয়টির। সামন্য বৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তা থেকে বিদ্যালয়ের মাঠ নিচু এবং তিনদিকে মাটির বাঁধ রয়েছে। বিদ্যালয়ের আশেপাশে ছোট-খাটো কালভার্ট ও ড্রেনেজ ব্যাবস্থা না থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। মাঠটির বেশির ভাগ অংশই কচুরিপানা, আগাছায় ভরে গিয়ে জলমগ্নে পরিণত হয়েছে। শৌচাগারগুলো প্রায় ব্যাবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শৌচাগারের
চারপাশে আগাছা ও পানি থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এটি ব্যাবহার করতে পারছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে মাঠে নামতে পারছে না।
জলাবদ্ধতার শ্রেণিকক্ষে যাতায়াতের সময় শিক্ষার্থীরা অনেকেই পা পিছলে পড়ে যায়। এতে নোংরা হয় শিক্ষার্থীদের জামা-কাপড়।
এছাড়াও কাদা পানির কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাওয়াসহ শরীরচর্চা, জাতীয় সংগীত ও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুততার সঙ্গে স্কুল মাঠের জলাবদ্ধতা নিরসনের জোর দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
গেল বছরের ডিসেম্বর মাসে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে স্কুলটিতে হাত ধোয়ার বেসিনের কাজ করা হয়েছিল। বেসনিের পানি সরবরাহের জন্যে মাঠে বসানো হয়েছিল পানি উত্তোলনের মটর। সেই মটরটিও এখন ২ হাত পানির নিচে। মটরটি এখন প্রায় বিকল অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
বড় ধরণের কোনো বাজেট বরাদ্দ না থাকায় ১৯ বছরের জরাঝীর্ণ পুরাতন ভবনে ঝুঁকিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এছাড়াও শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ না থাকায় স্কুলের বারান্দায় ক্লাস নিতে হচ্ছে শিক্ষকদের।
অভিভাবকেরা জানায়, স্কুলটি উপকূলীয় এলাকায় হওয়ায় বেশিরভাগ সময় জোয়ারের পানিতে বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে যায়। রাস্তা থেকে মাঠ নিচু হওয়ায় বর্ষা ও সামন্য বৃষ্টিতে পানিবন্ধী হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সহনশীল ভবন না করায় নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।এছাড়া মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় সামান্য বৃষ্টিতে হাটু সমান জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সহকারী শিক্ষক সাইমা জানান, ২০০২ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে একই ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নতুন কোনো ভবন না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে পুরাতন ভবনই শিশুদের পাঠদানের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। শিশু শ্রেণির কক্ষ না থাকায় স্কুলের বারান্দায় শিশুদের ক্লাস নিতে হয়। সারা বছরই স্কুলের মাঠে পানি থাকায় শিশুরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে না। দ্রুত প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনশীল ভবন নিমার্ণ ও মাঠে বালু ভরাটের দাবিও জানান তিনি।
প্রধান শিক্ষক জান্নাতি বেগম জানান, এই বিদ্যালয়ে ১৫১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে একই ভবনে জোয়ার ও বর্ষার পানি নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। মাঠে পানি জমে থাকায় স্কুলের শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা করতে পারে না। পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় মাঠটিতে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। সামান্য বৃষ্টি হলেই মাঠে পানি জমে।
উত্তর চরবংশী ইউপি চেয়ারম্যান মো: আবুল হোসেন জানান, নিজ এলাকার সমস্যা সমাধানে আমি আন্তরিক। স্কুলের মাঠে জলাবদ্ধতা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কে,এম মোস্তাক আহমেদ জানান,স্কুলটি উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় প্রায় সময় স্কুলের মাঠে পানি জমি থাকে। স্কুল মাঠ বালুতে ভরাটের বিষয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউএনও বরাদ্দ দিলে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে। পুরাতন ভবনটি ব্যাবহার অনুপযোগী হওয়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগকে জানানো হবে এবং নতুন বিভাগের জন্যে আবদেন করা হবে।