২০ বছর আগে নির্মাণ করা টিন সেটের জড়াজীর্ণ ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পানছড়ি আশ্রয়ন প্রকল্পের ৫০০ পরিবার।
প্রকল্পের ২০টি ব্যারাক পুরোপুরিভাবে ভেঙে যাওয়ায় ইতোমধ্যে সেখান থেকে চলে গেছেন অন্তত ২শ’ পরিবার। বাকিরাও খাদ্য, পানি এবং কর্মসংস্থান সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ ঘর মেরামত করে দেয়াতো দূরের কথা, করোনা মহামারীর লকডাউনেও তাদের খোঁজ নেয়নি কেউ।
অন্যদিকে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিভিন্ন হয়রানীর পাশাপাশি দখল হয়ে গেছে শ্মশান ও কবরস্থান।তবে, উপজেলা প্রশাসন বলছেন আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের পুণরায় ঘর নির্মাণ করে দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।এছাড়া পানি এবং চিকিৎসা সংকট দূর করতেও নেয়া হচ্ছে পদক্ষেপ।
২০০০ সালে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পানছড়ি এলাকায় আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণ করে আওয়ামী লীগ সরকার। সেই সময় দেশের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ন প্রকল্প ছিল এটি। ৫টি টিলার উপর নির্মাণ করা ৫০টি টিনের ব্যারাকে ঠাঁই হয় ৫০০ ভুমিহীন পরিবারের।
কিন্তু দীর্ঘ ২০ বছরেও সংস্কারের ছোঁয়া না লাগায় ভেঙে পরছে ব্যারাকগুলোতে। ইতোমধ্যে, সেখানের ৫০টি ব্যারাকের মধ্যে ২০টি ব্যারাক ভেঙে মাঠিতে গুড়িয়ে গেছে। মাথা গুজার ঠাঁই হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন অন্তত দুইশ পরিবার। বাকি তিনশর অধিক পরিবার জড়াজীর্ণ ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। আশ্রয়ন প্রকল্পটি পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। সেখানে নেই কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় কিংবা ক্লিনিক। যে কারণে শিক্ষা ও সঠিক চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন পানছড়ি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা। দুটি পুকুর কখন করার হলেও ২০ বছরেও সেই পুকুরে উঠেনি পানি। নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে টিউবউয়েল।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিভিন্ন হয়রানীর স্বীকার হতে হচ্ছে তাদের। দখল হয়ে গেছে আশ্রয়ন প্রকল্পের একমাত্র শ্মশান ও কবরস্থান। ঘরগুলো সংস্কারের অভাবে বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। যে কারণে সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জানান স্থানীয় ইউপি সদস্য।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিৎ রায় দাশ জানান,পানছড়ি আশ্রয়ন প্রকল্পের জন্য নতুন ৩১টি ব্যারাক নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পানি এবং চিকিৎসা সংকট দূর করতেও নেয়া হচ্ছে প্রদক্ষেপ।
২০ বছরে আগে এই আশ্রয়ন প্রকল্পে ১২শ’ জনসংখ্যা থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৩ হাজার ৫০০ জনে। সেই সাথে বেড়েছে পরিবারের সংখ্যাও। শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থান সুবিধাসহ দ্রুত নতুন বাসস্থান নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।